বয়স হল ৯০ ৷ কিন্তু বইয়ের পাতায় টিনটিন একেবারে ইয়ং ৷ সঙ্গে অবশ্যই দুষ্টু-মিষ্টি কুট্টস ৷ টিনটিনের ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে সদা তটস্থ সে ৷ শুধুই ভেবে যায়, টিনটিন একটু বেশিই রহস্যের পিছনে ছুটছে ৷ মাঝে মধ্যে বকাঝকায় দিয়ে ওঠে টিনটিনকে ৷ তবে যাই হয়ে যাক না কেন, টিনটিনের সঙ্গে সদা আছে সে ৷ সেই লোহিত সাগর থেকে তিব্বতে, সেই পান্না রহস্য থেকে কানভাঙা মূর্তির খোঁজে ৷ তবে শুধু কুট্টুস নয়, প্রফেসর ক্যালকুলাস, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, জনশন ও থমশন, বিয়াঙ্কা ক্যাস্টাফিয়োরে, ৮৮ বছর ধরে সব্বাই রয়েছে টিনটিনের পাশে ৷ তাই তো মঙ্গলবার সারা বিশ্বে টিনটিনের জন্মদিনে সব্বাই হাজির !
বেলজিয়ামের কার্টুন শিল্পী রেমি এর্জের (বাংলায় হার্জ নামে পরিচিত) অমর সৃষ্টি সাংবাদিক টিনটিন। নিজের প্রিয় কুকুর কুট্টুস ও ক্যাপটেন হ্যাডককে নিয়ে টিনটিনের রহস্য ও রোমাঞ্চে ভরা দুনিয়া দীর্ঘ ৮৮ বছর ধরে বুদ করে রেখেছে আট থেকে আশিকে। হার্জ প্রথম টিনটিন কমিকস প্রকাশ করেন ১৯২৯ সালের ১০ জানুয়ারি। ল্য ভাতিয়েম সিয়েকল নামে একটি বেলজিয়ামের পত্রিকার ল্য প্যতি ভাতিয়েম নামে শিশুদের ক্রোড়পত্রে প্রথম প্রকাশ হয় টিনটিনের কমিকস। এরপরই বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই চরিত্রটি। একে একে প্রকাশিত হয় এই সিরিজের চব্বিশটি সিরিজ। সিরিজটি বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ইউরোপীয় কমিকসগুলির অন্যতম। মোট ৫০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত এই সিরিজের বইয়ের কপি বিক্রির সংখ্যা ২০ কোটিরও বেশি। টিনটিনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কার্টুন ছবি, অ্যানিমেশন সিনেমাও। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশু কিশোরদের কাছে দুঃসাহসি টিনটিন ব্যাপক জনপ্রিয়। ফক্স টেরিয়ার জাতের কথা বলা কুকুর কুট্টুস, উদ্ধত, উন্নাসিক খিটখিটে নাবিক হ্যাডক, প্রতিভাবান অথচ কানে কম শোনা প্রফেসর ক্যালকুলাস আর দুই বোকা গোয়েন্দা জনসন ও রনসনের দুনিয়ায় একবার ঢুকলে হারিয়ে যাবে যে কোনো বয়সের মানুষ। আর গায়িকা ও ক্যাপ্টন হ্যাডকের প্রেমিকা বিয়াঙ্কা তো রয়েইছে ! আমাদের পক্ষ থেকেও টিনটিনের জন্য রইল জন্মদিনের শুভেচ্ছা ৷
টানা ৯০ বছর ধরে চলে আসছে ৬২ পাতার রূপকথা৷ সাত থেকে সত্তর --- জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি বেলজিয়ামের সাহসী সাংবাদিক টিনটিন , ক্যাপ্টেন হ্যাডক , কুকুর স্নোয়ি আর অন্য সঙ্গীসাথীদের৷ চল্লিশেরও বেশি ভাষায় অনূদিত টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চার৷ সাংবাদিক হলেও সমুদ্রের তলা থেকে শুরু করে চন্দ্রপৃষ্ঠ পর্যন্ত সর্বত্র অবাধ গতি৷ মার্কিন মাফিয়া থেকে শুরু করে আমাজনের উপজাতি , মুখোমুখি হয়েছেন সবার৷ সত্যি -মিথ্যের বিভেদ ভুলে গোগ্রাসে সেই কাহিনী গিলেছে সবাই৷ কয়েক মাস পর ক্লাস থ্রি -তে উঠবে কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র সাগ্নিক মণ্ডল৷ জন্মদিনে তাকে টিনটিনের গল্পের সেট উপহার দিয়েছেন বাবা সঞ্জীব ও মা অপর্ণা৷ এত কিছু থাকতে হঠাত্ টিনটিন কেন ? অপর্ণার জবাব , ‘টিনটিনের সঙ্গে যে আমাদের ছোটবেলাও জড়িয়ে৷ ’ ঠিক কথাই তো৷ একটি পাক্ষিক পত্রিকায় প্রকাশিত টিনটিনের কমিকসের দু’টি মাত্র পাতা পড়ার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকত না এমন শিশুর সংখ্যা বাংলায় বিরল৷ ওই প্রথম বেলজিয়ান কার্টুনিস্ট জর্জে রেমি -র অমর এই সৃষ্টি বাংলায় পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলার পাঠকরা৷ শুধু অপর্ণা বা সঞ্জীবই নন , তখন থেকেই বাংলার অনেকেরই ছোটবেলা জড়িয়ে গিয়েছিল ক্ষীণকায় এবং মাথায় সোনালি চুলের অদ্ভুত হেয়ার স্টাইলের এই সাংবাদিক ও তার সর্বক্ষণের সঙ্গী সাদা ফক্স টেরিয়ারের জীবনযাত্রার সঙ্গে৷ দুই দুঁদে অপরাধীর পিছু ধাওয়া করে রাজস্থান পাড়ি দিয়েছেন গোয়েন্দা৷ সঙ্গে তাঁর ‘স্যাটেলাইট ’৷
দূরপাল্লার ট্রেনে উল্টো দিকে বসা কালো চশমা ও মোটা গুঁফো লোকটার দিকে কয়েক বার সন্দেহের চোখে তাকাতেই পাশ থেকে কানে এল ‘তুই যা ভাবছিস তা নয় ’৷ অপ্রস্ত্তত তোপসে সঙ্গে সঙ্গে মন দিল হাতে ধরা ‘টিনটিন ইন টিবেট ’-এ৷ সোনার কেল্লার এই দৃশ্য বা জয় বাবা ফেলুনাথে ফেলুদার টিনটিনেরই ‘দ্য ব্রোকেন ইয়ার ’ কাহিনির প্রচ্ছদটি দেখে ‘আফ্রিকার রাজা ’ কে হতে পারে তার সূত্র পাওয়া ঘটনা বুঝিয়ে দেয় টিনটিনের সম্মোহনী ক্ষমতা এড়াতে পারেননি খোদ সত্যজিত্ রায়ও৷ পার্ক স্ট্রিটের অক্সফোর্ড বুক শপ জানাল , শুধু শিশুরা নয় , টিনটিনের কমিকস সমান ভাবে পড়েন বড়রাও৷ জনপ্রিয়তার নিরিখে ‘টিনটিন ইন আমেরিকা ’র কথা বলছে অক্সফোর্ড৷ জানানো হয়েছে , ‘টিনটিন ইন কঙ্গো ’ বইটি বর্তমানে পাওয়াই যাচ্ছে না৷ পার্ক স্ট্রিটেরই ফ্যামিলি বুক শপের কর্ণধার অশোক বর্মন জানালেন , ‘চল্লিশ বছর আগে প্রথম আমার দোকানে টিনটিনের কমিকস আসে৷ প্রথমে মনে হয়েছিল এই বই কলকাতার বাজারে চলবে না৷ কিন্ত্ত , দু’দিনের মধ্যেই সব ক’টি বই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ভুল ভাঙে৷ এর পর আর কখনও টিনটিনের বিক্রি নিয়ে ভাবিনি৷ ’ বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী অশোকবাবু জানিয়েছেন , বইমেলায় প্রতি বছর বেশ কয়েক লক্ষ টাকার টিনটিন বেচা -কেনা হয়৷ যে একবার একটি বই কেনে , তার লক্ষ্য হয় পুরো সেট জোগাড় করার৷
কলেজ স্ট্রিটের বই ব্যবসায়ীরাও টিনটিনের জনপ্রিয়তা নিয়ে একমত৷ বেশির ভাগেরই দাবি , জনপ্রিয়তার নিরিখে অন্য যে কোনও কমিকসকে অনায়াসে দশ গোল দেবে টিনটিন৷ চার দশক আগে কলকাতায় যখন প্রথম টিনটিন বিক্রি হয় তখন তার দাম ছিল সাত টাকা করে৷ সেই দাম বেড়েছে ৭০ গুণ৷ কিন্ত্ত জনপ্রিয়তাও বেড়েছে কয়েকশো গুণ৷ বিশেষ করে বাংলায় টিনটিন অনুবাদ হওয়ার পর কলকাতার বাজারে টিনটিনের বিজয়রথ থামায় কার সাধ্য ? প্রায় ছ’দশক ধরে বাঁটুল , হাঁদা -ভোঁদা , নন্টে -ফন্টে , বাহাদুর বেড়াল ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রের জন্ম দেওয়া নারায়ণ দেবনাথ বলছেন , ‘ছবির প্রতি শিশুদের আকর্ষণ খুবই স্বাভাবিক৷ মজার কাহিনী তাই ছবির মাধ্যমে বলা হলে তার জনপ্রিয়তা বাড়বেই৷ ’ বাংলার মানুষ সহজেই নিজের ছোটবেলার সঙ্গে মিল খুঁজে পান বলেই এই প্রবল বিশ্বায়নের যুগেও তাঁর সৃষ্ট কার্টুন চরিত্রগুলি টিনটিন ও অ্যাস্টেরিক্সের মতো কমিকস দুনিয়ার কুলীনদের সঙ্গে সমানে লড়ে যাচ্ছে বলে বিশ্বাস নারায়ণ দেবনাথের৷ কলকাতার বই ব্যবসায়ীদের বাত্সরিক বেচাকেনার অনেকটা অংশই জুড়ে রয়েছে কমিকস৷ পুরোভাগে অবশ্যই সদ্য ৮৭ -তে পড়া টিনটিন৷ ৷
টিনটিন কমিক্স Bangla PDF Download:
- https://tohamh.wordpress.com/2017/11/03/download-tintin-in-bangla/
- https://tohamh.wordpress.com/
- https://www.rokomari.com/book/163120/tintin-series--24ti-boi-rokomari-collections-
- http://bengalipdfcomics.blogspot.com/p/tintin-bengali-comics-pdf-23-books.html
Tags:
Lifestyle