না ফেরার দেশে সুন্দর নগরীর স্বপ্নদ্রষ্টা আনিসুল হক ( ২৭ অক্টোবর ১৯৫২ - ৩০ নভেম্বর ২০১৭)


আনিসুল হক ( ২৭ অক্টোবর ১৯৫২ - ৩০ নভেম্বর ২০১৭) একজন বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ এবং টেলিভিশন উপস্থাপক। তিনি ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি বিজিএমই-এর সভাপতি ছিলেন, পরে এফবিসিসিআইর সভাপতি হন। পরবর্তীতে সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
আনিসুল হকের জন্ম চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালি জেলার কোম্পানীগঞ্জে ১৯৫২ সালে। তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রী অর্জন করেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।
১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়  ৩০ শে নভেম্বর  ২০১৭  রাতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাকে 'সুন্দর নগরী'তে পরিণত করার তার যে স্বপ্ন তা অপূর্ণই থেকে গেল। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্টে, তাঁকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ (সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস) ধরা পড়ে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে মেয়রের পারিবারিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৫ সালে ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিএনসিসি মার্কেট চালু, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে সড়ক উন্মুক্ত করা, শ্যামলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত সড়ক পার্কিংমুক্ত ঘোষণা, ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন আনিসুল হক। এছাড়া রাজধানীর সৌন্দর্য্য বর্ধনে নিয়েছিলেন বেশকিছু উদ্যোগ।
বর্ণাঢ্য জীবন ছিল আনিসুল হকের। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের মেয়র নির্বাচনে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবেও তিনি বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন। আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বড় ছেলে নাভিদুল হক দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এক মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওতে কর্মরত এবং আরেক মেয়ে তানিশা ফারিয়াম্যান হক মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। মেয়র হওয়ার আগে ব্যবসায়ী হিসেবে তিনিই মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন
আনিসুল হক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের তৈরি পোশাক খাত, জ্বালানি খাত, তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যম খাতের সঙ্গে জড়িত। পোশাকমালিকদের সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন সার্ক চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। 
গত বছরের শুরুতে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমনই কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন তিনি যার মধ্যে রয়েছে রাজধানীকে সুন্দর করতে যানজট নিরসনে তেজগাঁওসহ ১০টি এলাকার রাস্তা দখলমুক্ত করা, ২২টি ইউলুপ নির্মাণ, ৩ হাজার বাস নামানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন, সবুজায়নে ইকো বাস সার্ভিস চালু, ২০ হাজার বিলবোর্ড উচ্ছেদ ও পরিকল্পিত বিলবোর্ড স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ, সড়কে এলইডি বাতি সংযোজন, প্রধান সড়কগুলোকে রিকশামুক্ত করা, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন।
গত শতাব্দির আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করা আনিসুল হক ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলেন।
ব্যবসায়ী হিসেবেও আনিসুল হক ছিলেন সফল। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনিসুল হক আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন এবং বিজয়ী হন। 
আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নাভিদুল হক বোস্টনের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে মোহাম্মদি গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।
মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ; শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।  বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
Previous Post Next Post